হালিশহর থানার অভিযানে চাঞ্চল্যকর প্রবাসী ডাকাতি মামলায় গ্রেপ্তার ৭

By Rasel Das | ০৭ আগস্ট, ২০২৫ | 165 views
হালিশহর থানার  অভিযানে চাঞ্চল্যকর প্রবাসী ডাকাতি মামলায় গ্রেপ্তার ৭

ADVERTISEMENT
728 x 90

সঞ্জয় দত্ত:: দুবাই ফেরত মোহাম্মদ সামসু উদ্দিন গত ২১জুলাই'২৫ রাত ১০ ঘটিকায় দুবাই থেকে এয়ার এরাবিয়ান বিমান যোগে রওয়ানা দিয়ে গত ২১জুলাই'২৫ সকাল ০৮.০৫ ঘটিকায় চট্টগ্রাম শাহ-আমানত আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দরে পৌঁছেন। একই তারিখ সকাল অনুমান ০৮.১৫ ঘটিকার সময় বিমান বন্দর এলাকা থেকে একটি সিএনজি গাড়ী ভাড়া নিয়ে অলংকার যাওয়ার পথে হালিশহর থানাধীন সাগরপাড় লিংক রোড বারুনীঘাটস্থ ডগিরখাল ব্রীজের সংলগ্ন রাস্তার উপর পৌঁছলে পিছন থেকে একটি কালো রংয়ের মাইক্রোবাস এসে বাদীর ভাড়া করা সিএনজি গাড়ীটিকে চাপা দিয়ে থামিয়ে দেয়। 

এসময় মাইক্রো বাস হতে ০৩জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি নেমে বাদীকে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে বিদেশ থেকে নিয়ে আসা হ্যান্ডকেরী ব্যাগ, যার মধ্যে রক্ষিত ৩ জোড়া স্বর্ণের চুড়ি, যার ওজন ৮৭ গ্রাম, স্বর্ণের কানের দুল ১২ জোড়া, ওজন ২.৭৮ গ্রাম, স্বর্ণের বেস্টলেট ০১টি, ওজন ২.৩৫ গ্রাম,স্বর্ণের নুস পিন ০৩টি, ওজন ১.৫ গ্রাম সহ মোট ওজন ৯৩.৬৩ গ্রাম, মূল্য অনুমান ১৫,০০,০০০/-টাকা, স্যামসাং এস-২৪ এফই মডেল এর মোবাইল, স্যামসাং এস-২৪ আলট্রা মডেল এর মোবাইল, স্যামসাং এস-২৩, ২৫৬ মডেল এর মোবাইল, সিএনজির পিছনে থাকা ০৩টি লাগেজ, যার মধ্যে রক্ষিত মহিলাদের জামা, বিছানার চাদর, বোরকা, পর্দ্দা, রেজার মেশিন, বাচ্চাদের খেলনা, বাচ্ছাদের কাপড়, চকলেট এবং কিছু ইলেকট্রোনিক সামগ্রীসহ যার আনুমানিক মূল্য ২,৫০,০০০/-টাকা এবং বাদীর পাঞ্জাবীর পকেটের থাকা মানি ব্যাগে রক্ষিত নগদ ৮,০০০/-টাকা, দুবাই এর ৩২০ দেরহাম, যার বাংলাদেশী টাকায় ১১,২০০/-টাকা, বাদীর দুবাই এর ড্রাইভিং লাইসেন্স, দুবাই এর আইডি কার্ড নং-৭৮৪১৯৭৭৪৯১৯২৬০১, বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংক এর ডেভিট কার্ড সহ সর্বমোট ১৯,৮২,২০০/-টাকার মালামাল ডাকাতি করে নিয়ে যায়। এঘটনায় ভিকটিম মোহাম্মদ সামসু উদ্দিন হালিশহর থানায় হাজির হয়ে অজ্ঞাতানামা আসামীদের বিরুদ্ধে লিখিত এজাহার দায়ের করলে হালিশহর থানার এফআইআর নং-১৩, তারিখ- ২৩ জুলাই, ২০২৫; জি আর নং-৯৯, ধারা- ৩৯২ পেনাল কোড সংযোজিত ধারা ৩৯৫ পেনাল কোড রুজু হয়। এপ্রেক্ষিতে হালিশহর থানার অফিসার ইনচার্জ জনাব মোহাম্মদ জাকির হোসেন এর নেতৃত্বে পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবু হানিফ, অপারেশন অফিসার তীথংকর দাস, এসআই(নিঃ)/মোঃ ইমান হোসেন, এএসআই(নিঃ)/মোঃ রাকিবুল ইসলাম ভূইয়া, এএসআই(নিঃ)/মোঃ তারিকুল ইসলাম’দের সমন্বয়ে গঠিত একটি চৌকস আভিযানিক টিম গত ২৩/০৭/২০২৫ইং তারিখ তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে আসামীদের ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত মাইক্রো গাড়ির নাম্বার সংগ্রহ পূর্বক মালিকানার তথ্য যাচাই করে পাঁচলাইশ থানাধীন বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারস্থ দিগন্ত খাঁজা টাওয়ারের পার্কিং হতে মাইক্রো গাড়িটি জব্দ করেন।

অতঃপর গাড়ীর মালিকের তথ্য, তথ্য প্রযুক্তির বিশ্লেষণ ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম মহানগর সহ চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন থানা এলাকা হতে বিভিন্ন সময়ে অভিযান পরিচালনা করে মামলার ঘটনার সাথে জড়িত তদন্তপ্রাপ্ত আসামী ১। মো: মনির উদ্দিন(৩৩), ২। সৈয়দ মজিবুল হক(৪৭), ৩। মো: আলীম হাওলাদার জাবেদ(৩২), ৪। মোঃ হাসান(৩০), ৫। মোঃ রুবেল(২৭), ৬। মোঃ সুমন(২৬), ও ৭। মো: ইমরান মাহামুদুল প্র: ইমন(২৫) সহ মোট ০৭জনকে গ্রেফতার করেন।গ্রেফতারকৃত আসামী সৈয়দ মজিবুল হক (৪৭) জানায়, সে জনৈক দুবাই প্রবাসী ফয়সালের নিকট হতে হোয়াটসঅ্যাপ এর মাধ্যমে বিদেশ হতে আগত যাত্রীদের আগমনের তারিখ, যাত্রীদের ছবি সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে তদন্তেপ্রাপ্ত আসামী ১) মো: মনির উদ্দিন(৩৩) তার সহযোগী অপরাপর আসামীদেরকে নিয়ে বিদেশ হতে আগত যাত্রীদের নিকট হতে মূল্যবান মালামাল ডাকাতি/ছিনতাই করে। পরবর্তীতে লুণ্ঠিত মালামালের একটি অংশ আসামী সৈয়দ মজিবুল হক(৪৭) কে দেয়। এরই ধারাবাহিকরায় গত ২১/০৭/২০২৫ইং তারিখ আসামী সৈয়দ মজিবুল হকের তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেফতারকৃত আসামী মো: মনির উদ্দিন(৩৩) চট্টগ্রাম শাহ-আমানত আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দরের মূল গেইটে অবস্থান করে। মামলার বাদী বিমান বন্দর হতে মূল গেইট দিয়ে বাহির হয়ে একেখাঁন যাওয়ার জন্য সিএনজি ভাড়া করলে গ্রেফতারকৃত আসামী মো: মনির উদ্দিন(৩৩) উক্ত সিএনজি নাম্বার সংগ্রহ করে বিমান বন্দরের গেইটের বাহিরে থাকা আসামী মো: আলীম হাওলাদার জাবেদ’কে প্রদান করে। আসামী মো: আলীম হাওলাদার জাবেদ উক্ত তথ্য অত্র মামলায় ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত মাইক্রো গাড়ির চালক মো: সাদ্দাম হোসেনকে জানালে গাড়িতে থাকা ০৪নং আসামী মোঃ হাসান(৩০), ৫নং আসামী মোঃ রুবেল(২৭), ইমন, সুমন ও পলাতক আসামী রাসেল সহ আসামীরা বাদীর ভাড়া নেওয়া সিএনজিটিকে অনুসরন করতে করতে হালিশহর থানাধীন সাগরপাড় লিংক রোড বারুনীঘাটস্থ ডগিরখাল ব্রীজের সংলগ্ন রাস্তার উপর পৌঁছলে পিছন বাদীর ভাড়া করা সিএনজি গাড়ীটিকে চাপা দিলে সিএনজিটি রাস্তার রেলিং এর সাথে চাপা লেগে বন্ধ হয়ে যায়। সিএনজি বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে আসামী ৩) মো: আলীম হাওলাদার জাবেদ(৩২), ৪) মোঃ হাসান(৩০), ৫) মোঃ রুবেল(২৭) এবং পলাতক আসামী সুমন মাইক্রো গাড়ি হতে নেমে বাদীকে সিএনজি হতে জোর পূর্বক নামিয়ে ফেলে। একপর্যায়ে বাদীকে মৃত্যুর ভয়-ভীতি দেখিয়ে সিএনজি হতে বাদীর মালামালের ০৩টি লাগেজ ও বাদীকে আসামীদের গাড়িতে তুলে নিয়ে লাগেজে থাকা সকল জিনিসপত্র ও বাদীর হাত ব্যাগে থাকা স্বর্ণালংকার, মোবাইল ও নগদ টাকা জোর পূর্বক ছিনিয়ে নেয় এবং বাদীকে মারধর করে রাস্তার পাশে নামিয়ে দেয়। পরবর্তীতে পলাতক আসামী গাড়ির ড্রাইভার সাদ্দাম হোসেন উক্ত গাড়িটি মালিকের বাসার নিচে পার্কিংয়ে রেখে পালিয়ে যায়।গ্রেফতারকৃত আসামীরা জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনায় জড়িত বিষয়ে স্বীকার করলেও লুণ্ঠিত মালামালের বিষয়টি কৌশলে একে অন্যের উপর দোষ চাপিয়ে বিভিন্ন ধরনের বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রদান করে। একারণে গত ০৫/০৮/২০২৫ইং তারিখ মামলার গ্রেফতারকৃত আসামীদেরকে পুলিশ রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আসামীরা জানায় মামলার ঘটনার পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত আসামী আলীম হাওলাদার জাবেদ, মোঃ হাসান ও পলাতক আসামী সাদ্দাম, রাসেল চাঁদগাও থানাধীন পাঠানি গোদা এলাকার একটি দোকানে বাদীর নিকট হতে ছিনতাইকৃত স্বর্ণালংকার সমূহ বিক্রি করে। বিক্রিকৃত টাকা আসামীগণ নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে রিমান্ড প্রাপ্ত আসামী আলীম হাওলাদার জাবেদ, হাসানসহ চাঁদগাও থানাধীন পাঠানি গোদা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামীদের দেখানো ও সনাক্তমতে ০৫ ভরি ১১ আনা স্বর্ণ এবং আসামী আলীম হাওলাদার জাবেদ এর তথ্যের ভিত্তিতে অত্র মামলার বাদীর নিকট থেকে ছিনতাইকৃত স্যামসাং এস-২৪ আলট্রা এবং স্যামসাং এস-২৪ এফই মোবাইল ফোন উদ্ধার করেন এবং পলাতক আসামী ইমন ও সুমনকে গ্রেফতার করেন। বাদীর ছিনতাইকৃত অবশিষ্ট মালামাল পলাতক আসামী নোহা গাড়ীর ড্রাইভার সাদ্দাম ও রাসেলদ্বয়ের নিকট রয়েছে। বাদীর লুষ্ঠিত অবশিষ্ট মালামাল উদ্ধারের অভিযান অব্যাহত আছে। উল্লেখ যে, ১। আসামী সৈয়দ মজিবুল হক,২। মোঃ হাসান, ৩। মোঃ রুবেল এর বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার, অস্ত্র এবং নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ০১টি করে মামলা রুজুর তথ্য পাওয়া যায়।

ADVERTISEMENT
Responsive