মো: সেলিম উদ্দিন, লোহাগাড়া::
খোলা ট্রাকে লবণ বোঝাইয়ের কারণে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক পিচ্ছিল হয়। যার কারনে বাড়ছে দুর্ঘটনা। এ ব্যাপারে প্রশাসনের কোনো ধরনের তদারকি নেই।
সরেজমিনে দেখা যায়, চট্টগ্রাম - কক্সবাজার মহাসড়কে দূর্ঘটনার অন্যতম কারণ লবনবাহী ট্রাক। প্রতিনিয়ত দিনে রাতে খোলা ট্রাকে করে লবণ পরিবহন করা হয় এ সড়কে। লবন পানি গলে মারাত্মক পিচ্ছিল হয় মহাসড়ক। যার ফলে গাড়ী নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না চালকরা।
উপজেলার চুনতি জাঙ্গালিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় ১৫ জন প্রাণ হারালে টনক নড়ে সড়ক ও জনপদ বিভাগের। শুরু হয়ে যায় গতিরোধক নির্মাণ কাজ। অথচ, লবনবাহী ট্রাকের কারণেই দূর্ঘটনা বাড়ছে। লবনবাহী ট্রাক বন্ধের কোন পদক্ষেপ নেই।
দোহাজারি হাইওয়ে থানা সূত্রে জানা যায় গত মে, জুন, জুলাই, আগষ্ট এ চার মাসে চট্টগ্রাম- কক্সবাজার মহাসড়কে ১৯ দূর্ঘটনায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে আহত হয়েছে প্রায় শতাধিক। পানিযুক্ত লবণ বোঝাই কারণে সড়ক পিচ্ছিল হয়ে শুধু দুর্ঘটনা নয়, কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিও হচ্ছে। হাইওয়ে পুলিশের সামনে এইসব পানিযুক্ত লবণ বোঝাই গাড়ি চলাচল করলেও অনেকটা অন্ধ তারা। অনেকটা বিনাবাধায় পানিযুক্ত লবণ ট্রাকযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে।
বাসচালক আবু তাহের বলেন, লবণের পানিতে সড়ক পিচ্ছিল থাকার কারণে যানচলাচলে চরম বিগ্ন ঘটছে। অনেক সময় ৩০ মিনিটের পথে এক ঘণ্টা সময় পার হচ্ছে।
কোন সুরক্ষা ছাড়া প্রতিদিন শত শত লবনবাহী ট্রাক চলে এ মহাসড়কে। লবন বোঝাই ট্রাকগুলো সন্ধ্যা নামলেই কক্সবাজার ও টেকনাফ থেকে যাত্রা শুরু করে। রাতভর চলে। এ পর্যন্ত এ সড়কে দূর্ঘটনাও হয়েছে ভোর রাতে। রাতভর ঝরে পড়া খোলা ট্রাক থেকে নিসৃত লবন পানি পিচ্ছিল করে সড়ক। ভোর রাতে চালকরা নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে খাদে পড়ে নতুবা মুখোমুখি সংঘর্ষে দূর্ঘটনা ঘটায়।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পকরপোরেশনের (বিসিকের) তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে দেশে লবণের চাহিদার ৮০ ভাগই মেটানো হয়। প্রায় ৭০ হাজার একর জমিতে লবণ চাষ হচ্ছে। কক্সবাজার জেলার ৪৪ হাজার প্রান্তিক চাষি, ১ লাখ শ্রমিকসহ অন্তত ১০ লাখ মানুষ লবণ উৎপাদন, বিপণন, পরিবহণ ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তবে সচেতন মহল বলছেন, লবনশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে এবং দূর্ঘটনাও রোধ করতে হবে। তাই; সাবেক সাংসদ শাহজাহান চৌধুরী বলেছেন, রেল পথ ও পানি পথে লবন সরবরাহ করতে হবে।
দোহাজারী হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহবুবুর রহমান বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে লবন বোঝাই ট্রাকের কারণে দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হয়। লবণের গাড়ি দেখলেই আমরা মামলা দিয়ে সতর্ক করছি, ইতিমধ্যে লবণ বোঝাই ট্রাক গাড়িকে মামলা দেওয়া হয়েছে। আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।
দোহাজারী সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ- প্রকৌশল আবু হানিফ বলেন, নবণ হচ্ছে সোডিয়াম ক্লোরাইড। লবণের পানি যখন ভিটুমিনের উপর পড়ে তখন এক ধরণের বিশেষ আবরণ তৈরি হয়। যার কারণে গাড়ির চাকার সাথে রাস্তার যে ঘর্ষণবল তা কমে যায়। তখন চালক গাড়ি ব্রেক করলে স্লাডিং করে। অতিরিক্ত লবণবোঝাই করার কারণে রাস্তার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। তখন সড়ক দুর্ঘটনায় পতিত হয়। লবণ পানি নিঃসৃত হয়ে মহাসড়কের বিটুমিনের কার্পেটিংয়ের প্রলেপ উঠে যাচ্ছে। সড়কে ভাঙনও দেখা দেয়।
লবনবাহী ট্রাকের নিঃসৃত পানিতে পিচ্ছিল হয় মহাসড়ক, ঘটে দূর্ঘটনা
By Rasel Das |
০১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ |
115 views

ADVERTISEMENT
728 x 90
ADVERTISEMENT
Responsive